ফরিদগঞ্জে করোনার ভয়াবহতাকালে জননেতা ও জনপ্রতিনিধিদের খোঁজে নিম্ম আয়ের মানুষ! মামুন হোসাইনঃ করোনাভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত দেশ। এ মহামারি নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। সারা দেশে চলমান কঠোর ‘লকডাউনে আরও ১ সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কাজ না থাকায় একরকম ক্ষুধার যন্ত্রণায় দিন পার করছেন ফরিদগঞ্জের হাজার হাজার অসহায় দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ। কিন্তু অসহায় মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগেও পাশে নেই দেশের রাজনৈতিক দল, জনপ্রতিনিধি, বিত্তশালী এমনকি বেসরকারি কোনো উন্নয়ন সংস্থা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মহামারির সময় অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু সেই আহ্বানে এখনও প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি। সরকারি পর্যায়ে অসহায় মানুষকে ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ দেওয়া হচ্ছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় খুবই নগণ্য।জনগণের জন্য রাজনীতি- এমন স্লোগান দিলেও এ দুঃসময়ে তাদের চিন্তা বাদ দিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের নিরাপদে রাখতেই ব্যস্ত। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকেই আছেন সেলফ কোয়ারেন্টিনে (স্বেচ্ছায় সঙ্গত্যাগ)। অসহায় মানুষের পাশে না দাঁড়ালেও সরকারের বিরোধিতা কিংবা নানা পরামর্শ দেওয়ায় ব্যস্ত অনেকে। কিন্তু নিজেরা ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। তবে রাজনৈতিক দলের নেতাদের দাবি, করোনা মহামারিতে তারা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। জানতে চাইলে ইসমাইল হোসেন বলেন, করোনা মহামারিতে গরিব ও অসহায় মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কঠোর বিধিনিষেধ জারি করায় তাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। কিন্তু এসব মানুষের পাশে রাজনৈতিক দলগুলো নেই। আসলে রাজনৈতিক দলগুলো মুখে মানুষের কথা বললেও বাস্তবে তাদের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলেও সবার উচিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। রাষ্ট্রের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান, এনজিওগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, সরকারের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়।করোনা মহামারি শুরুর পর রাজনৈতিক দলগুলোকে সীমিত পরিসরে হলেও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক, হাত ধোয়ার সাবানসহ স্বাস্থ্যসামগ্রী এমনকি ত্রাণ বিতরণ করেন তারা। কিন্তু করোনার ভয়াবহতা যত বাড়ছে তাদের এসব কর্মকাণ্ড তত সীমিত হয়ে পড়ছে। চলমান কঠোর লকডাউনে অনেকেই এখন ঘরবন্দি। ডান-কিংবা বাম, ইসলামি বা প্রগতিশীল কোনো দলই নেই মাঠে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের বড় দুটি দলকেও সেভাবে অসহায় জনগণের পাশে দেখা যাচ্ছে না। ফটো সেশনের জন্য তারা লোক দেখানো কিছু স্হানে মাস্ক ও সহায়তা করলে ও বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে ভোটের জন্য অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের কদর বেড়েছিল। প্রার্থীরা তাদের বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং নানাভাবে আর্থিক সহায়তা করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তোড়জোড় শুরুর পরও একই দৃশ্য দেখা গেছে। প্রতিটি ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই তারা অসহায়দরে পাশে দাঁড়ান। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করা হলে এসব সম্ভাব্য প্রার্থীকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সহায়তার জন্য অনেকে যোগাযোগ করেও তাদের সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, করোনাকালীন এ দুঃসময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও যেন হাত গুটিয়ে বসে আছেন। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, এ দুঃসময়ে এনজিওগুলোর তৎপরতাও খুব কম। রোহিঙ্গাদের সহায়তায় যেভাবে এনজিওগুলোকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গেছে করোনাকালে অসহায় মানুষের পাশে তারা সেভাবে দাঁড়াচ্ছে না। সমাজের বিত্তশালীরাও তেমনভাবে নেই ছিন্নমূল মানুষের পাশে। দ্রুত এসব অসহায় মানুষের পাশে না দাঁড়ালে সামনের দিনগুলো তাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে পড়বে। একমুঠো ভাতের আশায় কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ইতোমধ্যে অনেকেই রাস্তায় বেরিয়ে আসছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্হানে বা সড়কের পাশে তাদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। দিন যত যাবে তাদের সংখ্যা বাড়বে। তখন করোনা নিয়ন্ত্রণের চেয়ে আরও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া আশঙ্কা তৈরি হবে।উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান বলেন, আসলে করোনায় এই পরিস্থিতিতে মূলত কেউই ভাল নেই। যারা নিজের কর্ষ্টাজিত অর্থ দিয়ে দান খয়রাত করেন, তারাও আজ বেকায়দায় রয়েছে। তা কোন ভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই । বিগত বছর আমি ব্যক্তিগত ভাবে ৫ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। পরবর্তীতে করো সংক্রমণ প্রতিরোধে দুই দফায় হাজার হার একাধিকবার ব্যবহার উপযোগি মাক্স বিতরণ করেছি। যাদের অঢেল অর্থ আছে, তাদের এই মূহূর্তে এগিয়ে আসা উচিত।উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার বলেন, রাজনৈতিক ভাবে বললে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় আমাদের অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আওয়ামীলীগের মনোনয়নে বিজয়ী। তারা সরকারি ত্রাণ সহায়তা দিয়ে চলছে। তবে এক্ষেত্রে যদি তারা দলের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতো তবে আরো অনেক বেশি ভাল হতো। হয়তরা সমন্বয়ের কারণে দলে থাকা অনেক দানশীলও এগিয়ে আসতে উজ্জীবিত হতো।ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জি এস তছলিম বলেন, করোনা এই পরিস্থিতিতে মুলত কেউই ভাল নেই। আমরা সরকারি ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এছাড়া আমার কথা হলো . সমাজের যারা দানবীর বা দানশীল রয়েছেন, তাদেরকে দেখেছি অবস্থা সম্পন্ন লোকদেরকে লক্ষ লক্ষ টাকা দিতে। কিন্তু এদের না দিয়ে গরীব লোকজন বা নিম্নমধ্য বিত্তদের পাশে দাড়ালে তাদের ইহকাল ও পরকাল উভয় স্থানেই লাভ হতো।ফরিদগঞ্জ যুবলীগের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান শাহীন বলেন, করোনার ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ায় এ মুহূর্তে সাংগঠনিক কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। যে কোনো সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়ানো সাংগঠনিক কাজের কর্মসূচির মধ্যেই পড়ে। আমি গত বছরও আমার সামর্থ্য অনুযায়ী মাননীয় সাংসদ সাংবাদিক শফিকুর রহমানের নির্দেশে ত্রাণ বিতরণ করছি। সর্বশেষ গত ৮ই জুলাই অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ করছি।এছাড়া ইদুল ফিতরের সময়ে নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষকে যুতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করেছি।পৌর বিএনপি সভাপতি আমানত গাজী বলেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারের এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিএনপির পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যসামগ্রীর পাশাপাশি ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে,গত বছর ও আমরা ফরিদগঞ্জ বিএনপির সমন্বয়ক আলহাজ্ব হান্নান সাহেবের নেতৃত্বে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দলমত নির্বিসে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি। জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী ও ঈদুল ফিতরে সারা দেশে অসহায় মানুষদের মধ্যে খাবার ও ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে স্থানীয় নেতাদের তাদের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সামনে ইদুল আযহার আগেইও আমরা ত্রাণ বিতরণ করবো। তবে বর্তমান এ কঠিন পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি বিত্তশালীদের আরও বড় পরিসরে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।