বিশেষ প্রতিনিধিঃ চুক্তিতে বাল্যবিয়ের দিতে গিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতিসহ বর-কনে পরিবার জনতার হাতে ধরা পড়ে। এঘটনা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অবহিত হলে তাৎক্ষণিক বিয়েটি ভেঙ্গে দেন।
ঘটনাটি ১৩ আগষ্ট বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় ঘটে।
জানা যায়, ওই উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের রতনের বাড়িতে একই গ্রামের দুলালের ছেলে ইকবাল হোসেন’র (২১) সাথে প্বার্শবর্তি বাড়ির মৃত আবদুল মান্নানের মেয়ে তামান্না আক্তার’র (১৪) চুক্তিতে গোপন বিয়ে সম্পাদন করতে চেয়েছেন ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জাবেদ হোসেনের ভাই একই গ্রামের মৃত নুরুজ্জামানের পুত্র মাঈনুল ইসলাম (৪৫)। পাত্র-পাত্রির নিজ বাড়িতে উক্ত বিয়ে সম্পাদন না করে অন্যের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করায় গ্রামবাসীর মনে নানান প্রশ্ন উদিত হয়। ন্যায্য প্রতিবাদী গ্রামবাসী তাৎক্ষণিক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন ও সাংবাদিককে ফোনে অবহিত করে। ফোন পেয়ে চেয়ারম্যান মনির হোসেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ জাকির হোসেনকে জানালে তিনি গ্রাম পুলিশ নিয়ে উক্ত বাল্যবিয়েতে বাধা দেন। এসময় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মাঈনুল ইসলাম মেম্বার ও গ্রামবাসীর উপর চড়াও হয়। এতে বিদ্রোহটা আরও বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে ওই গ্রামের যুব সমাজ বেরিয়ে আসলে মাঈনুল পালিয়ে স্থান ত্যাগ করে। বিয়ের আয়োজনে মাঈনুল কাজী ও মৌলভী নিয়ে বিয়ের আয়োজন শুরু করেন। কাজীর বালাম বইয়ে দু’জনের নাম ঠিকানা লিপিবদ্ধ হলেও অবশেষে বিয়েটি সম্পন্ন হয়নি।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোঃ জাকির হোসেন বলেন, আমার নিজ গ্রামে এই ঘটনা অথচ তারা আমাকে জানায়নি। গ্রামবাসী চেয়ারম্যানকে জানালে চেয়ারম্যান আমাকে জানায়। আমি তখনই গ্রাম পুলিশ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে রতনের বাড়িতে যাই এবং ঘটনার সত্যতা পাই। এসময় হুজুর কাজী উপস্থিত ছিলেন। আমি আবার চেয়ারম্যান সাহেবকে ফোন করি। তখন চেয়ারম্যান সাহেব ফোনে কাজীকে দ্রুত বাড়ি ত্যাগ করার হুকুম করেন। কাজী চলে যাওয়ার সময় গ্রামবাসী কাজীকেও আটক করার চেষ্টা করলে তিনি পালিয়ে গিয়ে বেঁচে যান। তিনি আরও বলেন, মাঈনুল ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার এমন ঘটনা বহুবার করেছে। এবার ধরা খেয়ে আবোল তাবোল বকার চেষ্টা করে। গ্রামবাসী তাকে আটক করে মারার জন্য উদ্বত হলে আমি সবাইকে বুঝিয়ে বলি এবং মাঈনুল জনতার হাত থেকে প্রাথমিক রেহাই পায়।
মেহের উত্তর ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত কাজী মাহবুবের ছেলে জানায়, আমাকে মাঈনুল আসতে বলেছে। আমি আসার পর তিনি আমার হাতে বর এবং কনের জন্ম নিবন্ধন তুলে দেন। যাতে উভয়ের বয়স সীমা যথাক্রমে ২১ ও ১৯। যে কারনে আমি বিয়ের কাবিন করাতে রাজি হয়েছি।
ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন বলেন, সচেতন গ্রামবাসী ফোনে ঘটনাটি জানতে পারি। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাকিরকে জানাই এবং শক্ত হাতে বিয়েটি না হওয়ার প্রতি ব্যবস্থা গ্রহন করি। গ্রামবাসীর মুখ থেকে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মাঈনুলের দায়িত্বহীন ভূমিকা ও অর্থের বিনিময়ে বাল্যবিয়ে সম্পাদনের যে ঘৃণিত দায়িত্ব পালন করেছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। এধরনের কার্যকলাপ থেকে ভবিষ্যতে বিরত থাকতে মাঈনুলকে কঠোর হুশিয়ারী করেন তিনি।
ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মাঈনুল ইসলাম বলেন, ছেলে এবং মেয়ে দু’জনেরই উপযুক্ত বয়স হয়েছে। উভয় পক্ষ পালিয়ে যাওয়ায় এবং উভয় পরিবার অসহায় বিধায় আমি তাদেরকে সহযোগিতা করছিলাম। গণ-মাধ্যম কর্মিদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, কাজী আমার ব্যক্তিগত কারনে এসেছে। আমিই তাকে এনেছি।
এলাকাবাসী বলেন, মাঈনুল কোনো চাকুরী কিংবা ব্যবসা করেন না। তিনি ভদ্র ও সাদামাটা একজন মানুষ। ওনার অর্থ উপার্জনের উপায় কি এবং কি ভাবে তিনি আয় করেন এবার গ্রামবাসী বুঝেছেন। তিনি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এই বাল্যবিয়েটি দিতে চেয়েছেন। ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকে তিনি এলাকার সকল ঘটনায় দালালি করে অসহায় মানুষদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাত করেন। নারী, মাদক সেবী ও মাদক বিক্রেতাদের সাথে তার রয়েছে গোপন আঁতাত। সাধারণ মানুষ দিনভর খেটে যা আয় করে তাতে তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খায় আর বাবুয়ানা করে পরের টাকায় খুব ভালোই চলছে অপরাধের গ্রামিন সম্রাট মাঈনুল। এধরনের ঘটনাগুলো তদন্ত স্বাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ জানান।