শিমুল অধিকারী সুমনঃ কৃষিশিক্ষা বই পড়ে বিদেশী জাতের মুরগী পালন করে আর্থিক সংকট ঘুচিয়ে চাঁদপুরের হাইমচরে নিজের ভাগ্য বদলাচ্ছেন সফল উদ্যোক্তা অনিক মহাজন অন্তর। নিজের জমানো টাকায় কেনা ৬টি মুরগী হতে তার সংগ্রহে এখন রয়েছে ৬ শতাধিক বিদেশী মুরগী। যে মুরগীগুলো স্থানীয় পর্যায়ে ডিম ও মাংসের চাহিদা মিটিয়ে অনলাইনের কল্যাণে তিনি বিক্রি করছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও।
৮ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার দুপুরে চরভৈরবী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পাড়া বগুলা গ্রামের ডায়োরী বাড়ীতে গেলে অনিকের সংগ্রহে শত শত বিদেশী মুরগী থাকার বিষয়টি জানা যায়। অনিক হচ্ছেন সনজিত মহাজন ও রিকা মহাজন দম্পতির দু’ মেয়ে এক ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান। তিনি এইচএসসি পাস করে স্নাতকে ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছেন।
সরজমিনে দেখা যায়, সেড করে আলাদা খোঁপে প্রায় ৪ শতাংশ জায়গার জুড়ে অনিক বিদেশী জাতের মুরগী লালন পালন করছেন। তার সংগ্রহে ইয়োরোপিয়ান সিল্কি, বাফ পলিশ ক্যপ, ইয়োকমা, সিলভার টেল বেন্থাম, বাফ বেন্থাম, জাপানিজ রেড মলটেড বেন্থাম, কলেম্বিয়ান লাইট ব্রাহামা, কলেম্বিয়ান বাফ ব্রাহামা, রেড মিলি, ফিজেল সিল্কি, মালয়েশিয়ায়ন সেরামা, মিশরীয় ফাওমি প্রজাতির মুরগিও রয়েছে। মুরগিগুলো ছোট থেকে বড় হয়ে যাওয়ার পর অনলাইনে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তিনি এগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করছেন। এতে করে তিনি উপজেলা পর্যায়ে ডিম ও মাংসের চাহিদা মেটানোতে ভূমিকা রাখছেন।
হাইমচর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে, এই হাইমচর উপজেলায় কক, লেয়ার ও বয়লার জাতের মুরগীই বেশি পালিত হয়। সব মিলিয়ে বছরে পোল্টি মুরগী থেকে প্রায় ০.১২ লক্ষ মেট্রিক টন মাংস ও ডিমের চাহিদা অর্জিত হচ্ছে। উৎসাহ বাড়াতে হাইমচরে ৩০ জন নিবন্ধিত পোল্টি খামারিকে প্রনোদনার আওতায় আর্থিক সহায়তাও করা হয়েছে।
এক সাক্ষাৎকারে উদ্যোক্তা অনিক মহাজন অন্তর বলেন, স্কুল জীবনে অষ্টম শ্রেণীর কৃষি শিক্ষা বই পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের জমানো টাকায় মাত্র ৬টি বহুজাতিক মুরগী কিনে লালন পালন শুরু করি। এরপর মুরগীর বাচ্চা ফুটিয়ে নিজের হাতে ভ্যাকসিনসহ সকল উপকরণ প্রয়োগের মাধ্যমে বাচ্চা বড় করতে থাকি। বর্তমানে আমার সংগ্রহে ৬শ’ এর অধিক মুরগী রয়েছে। যা আমি অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করছি। এমনকি মুরগীর বিষ্টাগুলোও আমি চাষাবাদের কাজে লাগাচ্ছি। মুরগীর খাবারের মূল্য বৃদ্ধিতে খুব বিপাকে রয়েছি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমার মুরগী পালন দেখতে আসায় আমারও ভালো লাগে। আমি আরও এগিয়ে যেতে সংশ্লিষ্টদের থেকে আর্থিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
জোবায়ের পোল্টি এন্ড ফিড থেকে জানা যায়, বস্তাপ্রতি মুরগীর খাবারের দাম ২শ’ থেকে আড়াই শ টাকা গেলো কয়েক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে। বিশেষ করে ৫০ কেজির যে বস্তা আগে ছিল ৩ হাজার ৪৫৭ টাকা। এখন তা হয়েছে ৩ হাজার ৬৩২ টাকা। প্রতি কেজিতে ৩.৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় পোল্ট্রি খামারিরা বিপাকে রয়েছে।
এসব বিষয়ে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: মাকসুদ আলম বলেন, আমরা সবসময়ই সহযোগিতা নিয়ে পোল্ট্রি খামারীদের পাশে রয়েছি। গেলো কয়েক মাসে ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১শ’ ৯০জন পোল্ট্রি খামারীকে প্রনোদনা প্রদানসহ সময়মত টিকা প্রদান, কৃমিনাশক ঔষুধ বিতরণ ও বিভিন্ন ফ্রি ভেটেরিনারি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা পরামর্শ এবং হাসপাতালে আগত খামারিদের পোল্ট্রি মুরগীর রোগ অনুসন্ধান করে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করছি।
তিনি আরও বলেন, অনিকের মতো উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে আমরা তাদের নিয়ে নানা সময়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করি। যেখানে মুরগীর ফাউল, টাইফয়েড, কলেরা, ব্রংকাইটিস রোগ সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। এতে করে উদ্যোক্তারা সময়মতো মুরগীকে টিকা প্রদান, কোয়ারেন্টাইমে রাখা, জীবনু নাশক দিয়ে খামার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, অসুস্থ অবস্থায় টিকা ব্যবহার না করা, হাতুড়ি ডাক্তারের পরামর্শ না নেয়াসহ যাবতীয় বিষয় বলছি। একই সাথে আর্থিক সংকট কাটাতে ঋণ সুবিধা সম্পর্কিত পরামর্শও দিয়ে আসছি।