শিমুল অধিকারী সুমনঃ অবসর বসে না থেকে নদী পাড়ি দিয়ে চর থেকে হোগলা পাতা সংগ্রহ করে সেগুলো দিয়ে হোগলা বানিয়ে সফল উদ্যোক্তা হচ্ছেন চাঁদপুরের হাইমচরের একটি গ্রামের অধিকাংশ গৃহবধূরা। তারা এক একটি হোগলা ৮০ থেকে ১শ’ টাকা দামে বিক্রি করছেন। যা শীতল পাটি নামেও সমাজে পরিচিত।
২০ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার দিনব্যাপী ৩নং আলগী দূর্গাপু ইউনিয়ের ২নং ওয়ার্ডের পশ্চিম চর কৃষ্ণপুর গ্রামে গেলে ঘরের গৃহবধূদের হোগলা বানিয়ে বিক্রি করতে দেখা যায়।
গ্রামের গৃহবধু মায়া রানী বলেন, এই হোগলাগুলো বানাতে আমাদের মেঘনা নদীর ওপারে চরে যেতে হয় হোগলা পাতা সংগ্রহ করার জন্য। এরপর এগুলো সুন্দরভাবে কেটেকুটে অবসরে মাটিতে বিছিয়ে বুনতে হয়। মাসে গড়ে ২০/২৫টি হোগলা বা শীতল পাটি তৈরি করা সম্ভব হয়।
শিখা নামের আরেক গৃহবধূ বলেন, হোগলা পাতা সংগ্রহে কোন টাকা লাগে না। শুধু চর এলাকায় গিয়ে ওগুলো কেটে ট্রলারে করে আনতে যা খরছ হয়। আর বাকিটা হচ্ছে পরিশ্রম। ঘরের কাজের পাশাপাশি হোগলা বা শীতল পাটি বুনে রাখা শেষ হলে বেপারীরা বাড়ী বাড়ী এসে নগদ টাকা দিয়ে এগুলো কিনে নিয়ে যায়।
একইভাবে শ্রী মতি, উজ্জ্বলা নামের গৃহবধূরাও বলেন, আমাদের এই গ্রামের প্রায় সকল বাড়ীতেই হোগলা বানানোর প্রচলন রয়েছে। মূলত হোগলা পাতা সংগ্রহ করতে হয় হাইমচর, নীলকমল ও গাজীপুর ইউনিয়নের জেগে ওঠা চর থেকে। আমাদের এই আয়বর্ধক কাজ আমাদের স্বামীসহ পরিবারের লোকজন সহায়তা করেন।
হাইমচরের চরকৃষ্ণপুর এলাকার হোগলা ক্রেতা লক্ষী নারায়ন ভক্তসহ বেপারী কাজে সংশ্লিষ্ট সুজন, আজিজ বেপারী, কুট্টি বেপারীসহ অন্যরা বলেন, পরিশ্রম করলে স্বল্প পুঁজিতে যে লাভবান হওয়া যায় গৃহবধূদের হোগলা তৈরি বিষয়টি এমনই এক উদাহরণ। আমরা যে দামে হোগলাগুলো গৃহবধূদের থেকে বাড়ী বাড়ী গিয়ে ক্রয় করি তার থেকে ২০/৩০ টাকা বেশি দামে এনে বিক্রি করছি। মূলত হোগলাগুলো ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও মিলাদ মাহফিলের কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। যদি এই গৃহবধূ উদ্যোক্তাদের পাশে প্রশাসন এগিয়ে আসে তাহলে গৃহবধূরা আরও এগিয়ে যেতে পারবে।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের হাইমচরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা বলেন, আমাদের চরকৃষ্ণপুরের গৃহবধূদের হোগলা বানানো একটি ঐতিহ্যবাহী কাজ। হোগলা বানানোর গৃহবধূরাই শুধু নন বরং যেকোন উদ্যোক্তাই আমাদের কাছে আসলে উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মকভাবে তাদের পাশে আছে।